পরাজিত হাসিনা সরকারের পদলেহনকারীদের সচিবালয়ে পদায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পরাজিত হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসন ও তথ্য ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তারা বেআইনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একটি মেরুদণ্ডবিহীন, রাজনৈতিক পদলেহনকারী জনপ্রশাসন তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাদের প্রেতাত্মা এখনও সক্রিয় থেকে একই পদ্ধতি অনুসরণ করছে, যা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল বর্তমান সরকারের নীতি-আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
ছাত্র –জনতার আন্দোলনে ২৪ শের পরাজিত শেখ হাসিনা সরকারের বিশ্বস্থ ও আস্থাভাজন আমলারা সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের চারপাশে তারাই এখনো বহাল তবিয়তে থেকে অধিনস্থ দপ্তর সংস্থাসমূহ দাপটের সাথে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সচিবালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে নবনিযুক্ত উপদেষ্টাগণ স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বা সিনিয়র সচিবগণ সার্বক্ষণিকভাবে উপদেষ্টাদের ঘিরে আছেন, নানা ছলাকলায় জ্ঞান দিচ্ছেন। অনেকেই নিজেদের বর্তমান সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে প্রমাণের চেষ্টাও করছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া এই প্রশাসন এসবের আড়ালে কৌশলে নিজেদের ভিত্তি সুসংহত করার পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মকর্তাদের বেছে বেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করেও চলেছেন।
গত ৮ আগস্ট নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ৪২ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে জনসংযোগ কাজে সংযুক্ত বিসিএস তথ্য ক্যাডারের ৪২ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেন। এর ফলে জনসংযোগ অফিসার শূন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন উপদেষ্টাগণ যোগদানের পর মিডিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম প্রায় অচল অবস্থা তৈরি হয়। প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় এ অবস্থা চলার পর তথ্য অধিদপ্তরকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পিআরও নিয়োগ দানের দায়িত্ব প্রদান করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয় কর্তৃপক্ষ ।এ দায়িত্ব পাওয়ার পর তথ্য অধিদপ্তরে শেখ হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতরাই অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পরিবর্তে বেছে বেছে ছাত্র লীগ এবং আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টাদের জনসংযোগ কাজে সংযুক্তি প্রদান করে। নিয়োগ প্রাপ্ত এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে বিবেকানন্দ রায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, পবন চৌধুরীকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, দীপংকর বরকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়, নোবেল দে কে সড়কযোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো: শফিউল্লাহকে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, গাজী তৌহিদ কে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাকির হোসেনকে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং অতিরিক্তি দায়িত্ব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাগণের সাথে সংযুক্ত করে পুরস্কৃত করা হয়। এদের মধ্যে কারো কারো বিগত হাসিনা সরকারের সাথেও বিশেষ সখ্যতা রয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
উল্লেখ্য সচিবালয়ে পরাজিত হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসন ও তথ্য ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তারা বেআইনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দাপটের সাথে একটি মেরুদণ্ডবিহীন, রাজনৈতিক পদলেহনকারী জনপ্রশাসন তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাদের চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবি ।