নিজস্ব প্রতিবেদক :নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহাজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন।
আপিল বিভাগে এটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনায় দেয়া বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি আজ এ কথা বলেন।
বক্তৃতার শুরুতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শহিদদের স্মরণ করে বলেন, সারা দেশের ছাত্র-জনতা ও শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। যারা এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলেন তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে আপিল বিভাগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিগত সময়ে অন্যায়কে ন্যায় বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহাজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফলে আমার কাঁধে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা আমি পালন করে যাব।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে। এতদিন ন্যায়বিচারের পরিবর্তে নিপীড়নের নীতি প্রচলিত ছিল।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন থেকে কোনো ধরনের অন্যায় হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্র-জনতার সীমাহীন আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে বিজয় এসেছে, তার প্রতি সম্মান রেখে আমি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবো।
তিনি বলেন, নি¤œ আদালতের বিচারকদের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছে তারা ন্যায়বিচারের জন্য তাকিয়ে আছে।
এর আগে আজ সকাল ৭টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। পরে সাভার থেকে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে জাতীয় শহিদ মিনারে পৌঁছান। এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসঙ্গে জাতীয় শহিদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ছাড়াও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগন, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে তাকে শপথ পাঠ করান। দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে ১০ আগষ্ট নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে ওইদিনই প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের বিচারক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ও সপ্রিম কোর্টের প্রয়াত জ্যেষ্ঠ বরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এবং প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের ছেলে। সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে বিএ ও এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্ম সৈয়দ রেফাত আহমেদের। তিনি ১৯৮৪ সালে জেলা আদালতে, ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট এবং ২০০২ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন।
২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান। দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পাকিস্তান, আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।