Sunday, December 3, 2023
Homeজনপ্রিয়বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কালের স্রোত ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুল প্রত্যাশিত প্রায় ৩.৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে টানেলটি উন্মোচন করার পর বন্দর নগরী চট্রগ্রাম দেশের ঐতিহাসিক যোগাযোগের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এই ধরণের টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই প্রথম। প্রধানমন্ত্রী আজ সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলীর উত্তর তীরে পতেঙ্গায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের’ ফলক উন্মোচন করেন এবং নগরীর পতেঙ্গাকে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযোগকারী এই টানেলের ভেতর দিয়ে প্রথম যাত্রা করেন।’
এরপর তিনি টানেল অতিক্রম করেন এবং নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় তাঁর মোটরযানের জন্য টোল পরিশোধ করেন।
১০,৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সংযোগ সড়কসহ ৯.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল সোমবার সকাল ৬টা থেকে যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
দেশের দু’টি অঞ্চলকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর পর সড়ক পরিবহন খাতে টানেলটি দ্বিতীয় ‘স্বপ্নের প্রকল্প’। চীনের সাংহাইয়ের মতো ‘দুই শহর এক নগরী’ মডেল অনুসরণ করে টানেলটি তৈরি করা হয়েছে।
এটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম এবং প্রথম নদীর তলদেশে সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সীলমোহরও ব্যবহার করেন।
কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিদিন ১,৭০০টিরও বেশি যানবাহন টানেলটি ব্যবহার করতে সক্ষম হবে যা বছরে প্রায় ৭৬ লক্ষ যানবাহনের সমান। টানেলটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.১৬৬ শতাংশ বাড়াতে সাহায্য করবে।
বাসস’র সাথে আলাপকালে, মেগা প্রকল্পের পরিচালক মো.হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলটি বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে আশা করা হচ্ছে। কারণ, এটি এই অঞ্চলের প্রথম নদীর তলদেশে সড়ক সুড়ঙ্গ।
এটি চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই শহরের মতো ‘দুটি শহরকে একটি নগরীতে’ পরিণত করবে। এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা এবং শিল্পায়ন, পর্যটন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং সড়ক যোগাযোগের বিকাশের জন্য অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে শহরের পরিধিকে সমগ্র অঞ্চলে প্রসারিত করবে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানেলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ এর দুই পাশের দু’টি বড় অর্থনৈতিক করিডোরকে সংযুক্ত করে চট্টগ্রামকে লজিস্টিক হাবে পরিণত করতে একটি গেম চেঞ্জার হবে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ নদীর তলদেশে সড়ক সুড়ঙ্গের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যা অবশ্যই সমগ্র জাতির জন্য গর্বের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ব্যাপকভাবে সুবিধা দেবে।
তিনি বলেন, টানেলটি এই অঞ্চলে শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে কারণ, চট্টগ্রাম-কেইপিজেড-এর আনোয়ারায় দু’টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং হালিশহরে চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং আনোয়ারাতে চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চল (সিইআইজেড) এই টানেলের মাধ্যমে পর্যাপ্ত সুবিধা পাবে।
আলম বলেন, এটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে সংযুক্ত করবে এবং এটি কক্সবাজারে চলমান এবং পরিকল্পিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাবকেও সুবিধা দেবে, যা ইতিমধ্যেই দেশের একটি পর্যটন কেন্দ্র।
এভাবে পদ্মা সেতুর মতো দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, টানেল ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা গেলে এবং কর্ণফুলী নদীর তীরে পরিকল্পিত শিল্পায়নকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করা গেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। পাশাপাশি এটি মিজোরাম এবং মণিপুরসহ ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’-এর সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়াতে পারে এবং এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটনের প্রসার ঘটাতে পারে।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, টানেলের দ’ুটি টিউব প্রায় ১২ মিটার দূরত্বে রয়েছে। উভয় টিউব ট্রাফিকের জন্য দুই লেন বিশিষ্ট এবং আনোয়ারা প্রান্তে অতিরিক্ত ৭২৭-মিটার দীর্ঘ ওভার-ব্রিজসহ টানেলের প্রতিটি প্রান্তে একটি ৫.৩৫-কিলোমিটার সংযোগ সড়ক অবস্থিত।
এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নত হবে।
মোট ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ৬,০৭০ কোটি টাকা দিয়েছে এবং চীনা কোম্পানি, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর যৌথভাবে টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা টানেল বোরিং পর্যায়ও উদ্বোধন করেন।
মাল্টিলেন টানেল রুটটি একদিকে নেভি কলেজের কাছাকাছি নদীর মধ্য দিয়ে গেছে এবং অন্যদিকে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরন (কেইপিজেড) অঞ্জল এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো)।
এতে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ’ুটি সেতুর যানজটও কমবে।সুত্র-বাসস

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

রেফাজুর রহমান
১০/২ , মতিঝিল ঢাকা-১০০০
ই-মেইল : dailykalersrot24@gmail.com