Friday, December 8, 2023
Homeআন্তর্জাতিককবি আসাদ চৌধুরী কানাডার লেকেরিজ হেলথ অশোয়া হাসপাতালে চির বিদায় নিলেন

কবি আসাদ চৌধুরী কানাডার লেকেরিজ হেলথ অশোয়া হাসপাতালে চির বিদায় নিলেন

বাংলা সাহিত্যের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর কবি আসাদ চৌধুরী কানাডার লেকেরিজ হেলথ অশোয়া হাসপাতালে আজ ভোরে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র, এক কন্যা, নাতিনাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এই মহান ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের সকল সদস্য ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি । 

বাংলা একাডেমি এবং একুশে পদক প্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি সস্ত্রীক গত ২৬ সেপ্টেম্বর কবির শারীরিক অবস্থার খবর নিতে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। এছাড়া, হাইকমিশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত কবির শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছিল। 

কবি আসাদ চৌধুরী বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডায় তাঁর প্রবাসী ছেলে ও মেয়ের সাথে বাস করছিলেন। তিনি গত বছর নভেম্বর থেকে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এর সাথে হৃদরোগজনিত সমস্যা যুক্ত হলে তাঁকে সম্প্রতি স্বল্প সময়ের মধ্যে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। 

কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের অন্যতম। তা ছাড়া তিনি তাঁর আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী এবং টেলিভিশনের অনেক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। তিনি তাঁর ভরাট কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি করে মানুষের মন জয় করেছেন । মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অনুবাদকর্মে তাঁর অবদান প্রণিধানযোগ্য । তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় । এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ “সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু” সর্বোপরি তিনি ছিলেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর শব্দ সৈনিক তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্ণাঢ্য জীবনে কবি শিক্ষকতা সাংবাকিতা পেশায়ও জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন । 

কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন । কবির পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া এবং মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম । কবির পিতা পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য ছিল। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী হাইকমিশন কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া, কবি ও তার পরিবারের সাথে পারিবারিক পর্যায়ে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে হাইকমিশনের বিভিন্ন উদ্যোগে আমি কবির পরামর্শ গ্রহণ করেছি। দেশে ও বিদেশে তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করেছেন । প্রবাসে, উত্তর আমেরিকায় বাংলা সাহিত্যের অগ্রযাত্রা এবং এখানকার সাহিত্যানুরাগীদের বাংলা ভাষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট করতে তাঁর অবদান অসীম ও অনস্বীকার্য। তাঁর মৃত্যুতে শুধু বাংলাদেশেই নয়, কানাডাসহ সারা পৃথিবীর বাংলাভাষী প্রবাসীদের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কবি আসাদ চৌধুরী আর শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন না। কিন্তু তাঁর রচিত সাহিত্য সম্ভার আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। অনাগত দিনে বাংলা সাহিত্যের পাঠক নিবিড় ভালবাসায় কবির সৃষ্ট পদ্য ও গদ্য পাঠ করবেন। কবি বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টি কর্মে । 

আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা এই মহান কবির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। 

 

ড. খলিলুর রহমান

হাইকমিনার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

রেফাজুর রহমান
১০/২ , মতিঝিল ঢাকা-১০০০
ই-মেইল : dailykalersrot24@gmail.com